অলিভ অয়েল তেলের দাম কত ২০২৫: বর্তমান বাজার মূল্য ও আপডেট
অলিভ অয়েল বা জলপাই তেল পৃথিবীব্যাপী একটি সুপরিচিত স্বাস্থ্যকর তেল, যা প্রাচীনকাল থেকেই রান্না, চিকিৎসা ও সৌন্দর্যচর্চায় ব্যবহৃত হচ্ছে। এতে রয়েছে প্রাকৃতিক অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং স্বাস্থ্যকর ফ্যাটি অ্যাসিড, যা শরীরকে রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে। আধুনিক যুগে এর ব্যবহার আরও বহুল হয়েছে, বিশেষ করে স্বাস্থ্য সচেতন মানুষের কাছে এটি প্রতিদিনের জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।
বাংলাদেশেও অলিভ অয়েলের বাজার দ্রুত বিস্তৃত হচ্ছে। শহুরে জীবনধারায় মানুষ এখন স্বাস্থ্যবান থাকার জন্য অলিভ অয়েল ব্যবহারে আগ্রহী। অনেকেই জানতে চান—অলিভ অয়েল তেলের দাম কত ২০২৫ সালে? কারণ ব্র্যান্ড, প্রকারভেদ ও আন্তর্জাতিক বাজারে দামের ওঠানামা এর উপর সরাসরি প্রভাব ফেলে। এ নিবন্ধে আমরা দাম, উপকারিতা, ব্র্যান্ড ও কেনার কৌশল নিয়ে বিস্তারিত বলব।
২০২৫ সালে অলিভ অয়েলের মূল্য তালিকা
বাংলাদেশে অলিভ অয়েলের দাম ভিন্ন ভিন্ন ব্র্যান্ড, প্রকারভেদ (Extra Virgin, Pure, Pomace) এবং প্যাকেটের আকার অনুযায়ী নির্ধারিত হয়। নিচে ২০২৫ সালের জন্য একটি ধারণামূলক দাম তালিকা দেওয়া হলো:
প্রকারভেদ | পরিমাণ | গড় দাম (২০২৫) | জনপ্রিয় ব্র্যান্ড |
এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল | ২৫০ মিলি | ৪০০–৫০০ টাকা | Figaro, Borges, Olitalia |
এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল | ৫০০ মিলি | ৭৫০–৯০০ টাকা | Sasso, Bertolli |
পিওর অলিভ অয়েল | ১ লিটার | ১,২০০–১,৪০০ টাকা | Figaro, Borges |
পোমেস অলিভ অয়েল | ১ লিটার | ৯০০–১,১০০ টাকা | Olitalia, Deoleo |
এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল | ২ লিটার | ২,৩০০–২,৮০০ টাকা | Bertolli, Sasso |
অলিভ অয়েল তেলের দাম কত বাংলাদেশে

অলিভ অয়েল তেলের দাম বাংলাদেশে ব্র্যান্ড, প্রকারভেদ এবং বোতলের আকার অনুযায়ী ভিন্ন হয়। ২০২৫ সালে ২৫০ মিলি এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েলের দাম গড়ে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা, আর ৫০০ মিলি বোতলের দাম ৭৫০ থেকে ৯০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যায়। পিওর অলিভ অয়েল ১ লিটার বোতল সাধারণত ১,২০০ থেকে ১,৪০০ টাকার মধ্যে বিক্রি হয়।
পোমেস অলিভ অয়েল তুলনামূলক সাশ্রয়ী, যার ১ লিটার বোতলের দাম প্রায় ৯০০ থেকে ১,১০০ টাকা। বাংলাদেশে ফিগারো, বোরজেস, অলিটালিয়া এবং বার্টোলি ব্র্যান্ডগুলো বেশি জনপ্রিয়। শহরের সুপারশপ ও অনলাইন প্ল্যাটফর্ম যেমন দরাজ বা চালডালে সহজেই এসব তেল পাওয়া যায়। মান ও ব্র্যান্ডভেদে দাম ভিন্ন হলেও স্বাস্থ্যসচেতন মানুষদের কাছে এগুলোর চাহিদা দ্রুত বাড়ছে।
অলিভ অয়েল তেলের দাম কত ১ লিটার
অলিভ অয়েল তেলের দাম ১ লিটার বোতলের ক্ষেত্রে প্রকারভেদ ও ব্র্যান্ড অনুযায়ী ভিন্ন হয়। ২০২৫ সালে বাংলাদেশে ১ লিটার এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েলের দাম সাধারণত ১,৪০০ থেকে ১,৭০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যায়। অন্যদিকে, পিওর অলিভ অয়েল ১ লিটার বোতলের দাম গড়ে ১,২০০ থেকে ১,৪০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। পোমেস অলিভ অয়েল তুলনামূলক সাশ্রয়ী, যার দাম প্রায় ৯০০ থেকে ১,১০০ টাকা। ফিগারো, বোরজেস ও অলিটালিয়া এসব দামের মধ্যে জনপ্রিয় ব্র্যান্ড।
অলিভ অয়েল তেলের দাম কত ১০০ মিলি
অলিভ অয়েল তেলের দাম ১০০ মিলি বোতলের ক্ষেত্রে তুলনামূলক সাশ্রয়ী হলেও প্রকারভেদ ও ব্র্যান্ড অনুযায়ী ভিন্ন হয়। ২০২৫ সালে বাংলাদেশে ১০০ মিলি এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েলের দাম সাধারণত ১৮০ থেকে ২৫০ টাকার মধ্যে পাওয়া যায়।
কিছু প্রিমিয়াম ব্র্যান্ড যেমন ফিগারো, বোরজেস ও বার্টোলি সামান্য বেশি দামে বিক্রি করে, যেখানে স্থানীয় বা কম পরিচিত ব্র্যান্ডগুলো তুলনামূলক কম দামে পাওয়া যায়। ছোট আকারের বোতল সাধারণত সৌন্দর্যচর্চা বা ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যচর্চার জন্য বেশি ব্যবহৃত হয়।
ত্বকের অলিভ অয়েল তেলের দাম কত
ত্বকের জন্য অলিভ অয়েল তেলের দাম বাংলাদেশে ব্র্যান্ড, মান এবং প্যাকেটের আকার অনুযায়ী ভিন্ন হয়। ২০২৫ সালে ৫০ মিলি থেকে ১০০ মিলি বোতলের দাম সাধারণত ২০০ থেকে ৩৫০ টাকার মধ্যে পাওয়া যায়। ফিগারো, অলিটালিয়া এবং বোরজেসের মতো ব্র্যান্ড ত্বকের যত্নের জন্য উপযোগী অলিভ অয়েল সরবরাহ করে।
অনেক কসমেটিকস শপ ও অনলাইন প্ল্যাটফর্মে ত্বকের জন্য বিশেষভাবে লেবেল করা অলিভ অয়েল পাওয়া যায়। এটি প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজার হিসেবে ত্বক নরম রাখতে ও শুষ্কতা দূর করতে কার্যকর।
অলিভ অয়েলের প্রকারভেদ
Extra Virgin Olive Oil (এক্সট্রা ভার্জিন): সবচেয়ে বিশুদ্ধ ও স্বাস্থ্যকর অলিভ অয়েল। এতে কোলেস্টেরল কমানো, হার্টের সুরক্ষা এবং ত্বকের জন্য অসাধারণ উপকারিতা রয়েছে।
Pure Olive Oil (পিওর অলিভ অয়েল): এটি তুলনামূলকভাবে সাশ্রয়ী এবং সাধারণ রান্নায় ব্যবহার উপযোগী।
Pomace Olive Oil (পোমেস): জলপাইয়ের অবশিষ্টাংশ থেকে তৈরি হলেও রান্নার জন্য জনপ্রিয়। দামও অন্যান্য প্রকারের তুলনায় কম।
বাংলাদেশের বাজারে অলিভ অয়েলের জনপ্রিয় ব্র্যান্ড

- Figaro Olive Oil – দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশে পরিচিত একটি ব্র্যান্ড।
- Borges Olive Oil – ইউরোপীয় মানের স্বাস্থ্যকর তেল।
- Olitalia Olive Oil – ইতালিয়ান উৎপাদিত, বাংলাদেশে চাহিদা বাড়ছে।
- Sasso & Bertolli – প্রিমিয়াম মানের Extra Virgin অলিভ অয়েলের জন্য জনপ্রিয়।
অলিভ অয়েলের স্বাস্থ্য উপকারিতা
- হৃদরোগ প্রতিরোধে সহায়ক
- কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখে
- ওজন কমাতে সাহায্য করে
- ত্বক ও চুলের যত্নে কার্যকর
- ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারী
সৌন্দর্যচর্চায় অলিভ অয়েলের ব্যবহার
- ত্বকে ময়েশ্চারাইজার হিসেবে
- চুলের ঝলক ফিরিয়ে আনতে
- ডার্ক সার্কেল কমাতে
- লিপ বাম হিসেবে
রান্নায় অলিভ অয়েলের ব্যবহার
বাংলাদেশি রান্নায় অলিভ অয়েল ব্যবহারের প্রবণতা বাড়ছে। বিশেষ করে:
- সালাদ ড্রেসিং
- হালকা ভাজি
- গ্রিলড চিকেন ও ফিশ
- পাস্তা ও কন্টিনেন্টাল খাবার
২০২৫ সালে দাম বৃদ্ধির কারণ
২০২৫ সালে অলিভ অয়েলের দাম বৃদ্ধির পেছনে বেশ কিছু কারণ রয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে জলপাই সংগ্রহের খরচ উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে, যা সরাসরি উৎপাদন ও সরবরাহে প্রভাব ফেলছে। একই সাথে ডলারের মূল্যবৃদ্ধি আমদানিকৃত পণ্যের দামে অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করছে। ফলে ভোক্তাদের জন্য খরচ বেড়ে যাচ্ছে।
অন্যদিকে, বাংলাদেশে আমদানি শুল্ক বৃদ্ধি পাওয়ায় অলিভ অয়েলের দাম আরও বাড়ছে। এছাড়া ব্র্যান্ডভেদে মানের পার্থক্য থাকায় দামেও ভিন্নতা দেখা যায়। প্রিমিয়াম ব্র্যান্ডগুলো মান বজায় রাখতে বেশি দাম নির্ধারণ করে, আর সাধারণ ব্র্যান্ডগুলো তুলনামূলক সাশ্রয়ী রাখে। সব মিলিয়ে ২০২৫ সালে অলিভ অয়েলের দাম বৃদ্ধি একটি স্বাভাবিক বাজার পরিস্থিতি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
- আন্তর্জাতিক বাজারে জলপাই সংগ্রহের খরচ বৃদ্ধি
- ডলারের মূল্যবৃদ্ধি
- আমদানি শুল্ক বৃদ্ধি
- ব্র্যান্ডভেদে মানের পার্থক্য
কোথা থেকে কিনবেন অলিভ অয়েল
- সুপারশপ – Agora, Shwapno, Meena Bazar
- অনলাইন মার্কেটপ্লেস – Daraz, Chaldal
- ফার্মেসি ও কসমেটিকস শপ
অলিভ অয়েল কেনার টিপস
- লেবেল দেখে নিশ্চিত করুন এটি Extra Virgin নাকি Pomace
- উৎপাদন ও মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ দেখুন
- বিশ্বস্ত ব্র্যান্ড থেকে কিনুন
- দাম তুলনা করুন বিভিন্ন দোকান ও অনলাইন প্ল্যাটফর্মে
ভবিষ্যতে অলিভ অয়েলের বাজার প্রবণতা
ভবিষ্যতে অলিভ অয়েলের বাজার প্রবণতা ইতিবাচকভাবে বৃদ্ধি পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিশ্বে যেমন স্বাস্থ্যসচেতনতা বাড়ছে, তেমনি বাংলাদেশেও অলিভ অয়েলের ব্যবহার দিন দিন বেড়ে চলেছে। অনেক পরিবার এখন রান্না, সৌন্দর্যচর্চা এবং স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য অলিভ অয়েলকে প্রাধান্য দিচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, আন্তর্জাতিক বাজারে জলপাই উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি, ডলারের মান ও আমদানি শুল্কের প্রভাবের কারণে আগামী কয়েক বছরে এর দাম আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন
প্রশ্ন ১. অলিভ অয়েল তেলের দাম কত ২০২৫ সালে?
উত্তর: ২০২৫ সালে Extra Virgin Olive Oil 250 ml এর দাম গড়ে 400–500 টাকা, আর 1 লিটার Pure Olive Oil এর দাম প্রায় 1,200–1,400 টাকা।
প্রশ্ন ২. কোন ব্র্যান্ডের অলিভ অয়েল সবচেয়ে ভালো?
উত্তর: Figaro, Borges, Olitalia এবং Bertolli বাংলাদেশে জনপ্রিয় ও বিশ্বস্ত ব্র্যান্ড হিসেবে বিবেচিত।
প্রশ্ন৩. অলিভ অয়েল কি রান্নার জন্য ভালো?
উত্তর: হ্যাঁ, বিশেষ করে হালকা রান্না ও সালাদের জন্য Extra Virgin Olive Oil উপযুক্ত। Pomace সাধারণ ভাজিতে ব্যবহার করা যায়।
প্রশ্ন ৪. অলিভ অয়েল কি ওজন কমাতে সাহায্য করে?
উত্তর: হ্যাঁ, এতে থাকা হেলদি ফ্যাট শরীরে কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করে এবং দীর্ঘ সময় ক্ষুধা কম রাখে।
প্রশ্ন ৫. কোথায় পাওয়া যায় অলিভ অয়েল?
উত্তর: বাংলাদেশে সুপারশপ, অনলাইন প্ল্যাটফর্ম (Daraz, Chaldal) এবং ফার্মেসিতে সহজেই পাওয়া যায়।
চূড়ান্ত কথা
চূড়ান্ত কথা বলতে গেলে, অলিভ অয়েল বর্তমানে শুধু রান্নার উপাদান নয়, বরং একটি সম্পূর্ণ স্বাস্থ্যকর জীবনধারার অংশ হয়ে উঠেছে। ২০২৫ সালে এর দাম কিছুটা বেশি হলেও এটি শরীরের জন্য উপকারী হওয়ায় চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। স্বাস্থ্যসচেতন মানুষদের জন্য এটি একটি নির্ভরযোগ্য বিকল্প।
বাংলাদেশি বাজারে অলিভ অয়েলের দাম ব্র্যান্ড, প্রকারভেদ ও প্যাকেটের আকার অনুযায়ী ভিন্ন হতে পারে। তবে আসল পণ্য সঠিক জায়গা থেকে কিনলে দীর্ঘদিন ব্যবহারযোগ্য এবং কার্যকর থাকে। তাই অলিভ অয়েল কেনার সময় সবসময় বিশ্বস্ত দোকান বা অনলাইন প্ল্যাটফর্ম বেছে নেওয়া উচিত।