২৪ ক্যারেট স্বর্ণের দাম কত Today ২০২৫: ভরি ও গ্রামে সোনার রেট
সোনা শুধুমাত্র একটি ধাতু নয়, বরং এটি মানুষের আস্থা, সৌন্দর্য এবং নিরাপত্তার প্রতীক। পৃথিবীর প্রাচীনতম মূল্যবান ধাতুগুলোর মধ্যে সোনা সবসময় আলাদা জায়গা করে নিয়েছে। বাংলাদেশে এবং বিশ্বব্যাপী সোনা শুধু গহনা তৈরির জন্যই নয়, বরং বিনিয়োগ এবং সঞ্চয়ের অন্যতম নির্ভরযোগ্য মাধ্যম।
২০২৫ সালে এসে মানুষ আগের চেয়ে বেশি জানতে চাচ্ছে ২৪ ক্যারেট স্বর্ণের দাম কত today ২০২৫, কারণ প্রতিদিন সোনার দাম পরিবর্তিত হচ্ছে। বিশেষ করে ভরি ও গ্রামে সোনার রেট জানতে সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে বিনিয়োগকারী সবাই আগ্রহী। আজকের এই প্রবন্ধে আমরা সোনার দাম, এর বাজার বিশ্লেষণ, বিনিয়োগের দিক এবং ভবিষ্যৎ প্রবণতা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।
২৪ ক্যারেট সোনা কী এবং কেন এটি বিশেষ?
২৪ ক্যারেট সোনা মানে হলো খাঁটি বা প্রায় ৯৯.৯% বিশুদ্ধ সোনা। এর ভেতরে কোনো ধরনের অমিশ্রণ থাকে না। এ কারণেই এর মূল্য সর্বোচ্চ এবং এটি সবচেয়ে নরম।
- বিশুদ্ধতা: ২৪ ক্যারেট সোনা হলো ১০০% খাঁটি সোনা।
- ব্যবহার: সাধারণত গহনা তৈরিতে ২২ ক্যারেট ব্যবহৃত হয়, কারণ ২৪ ক্যারেট খুব নরম এবং সহজে আকার ধরে রাখতে পারে না। তবে ২৪ ক্যারেট সোনা মূলত বিনিয়োগ বা সংগ্রহে ব্যবহৃত হয়।
- জনপ্রিয়তা: সোনা সব সময় মুদ্রাস্ফীতির বিরুদ্ধে একটি নিরাপদ আশ্রয়স্থল, তাই যারা দীর্ঘমেয়াদি নিরাপদ বিনিয়োগ চান, তারা ২৪ ক্যারেট পছন্দ করেন।
আজকের ২৪ ক্যারেট স্বর্ণের দাম কত Today ২০২৫

বাংলাদেশে প্রতিদিনই সোনার দাম ওঠানামা করে এবং এ পরিবর্তন নির্ভর করে আন্তর্জাতিক বাজারের পরিস্থিতি, মার্কিন ডলারের মান, স্থানীয় চাহিদা এবং বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতির ঘোষণার ওপর। ২০২৫ সালে এসে সোনার দাম ধারাবাহিকভাবে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখাচ্ছে, যা ক্রেতা ও বিনিয়োগকারীদের মধ্যে নতুন আগ্রহ সৃষ্টি করেছে।
বর্তমানে ভরি ও গ্রামে ২৪ ক্যারেট স্বর্ণের দাম কত today ২০২৫ – এ নিয়ে মানুষের কৌতূহল সর্বাধিক। সাধারণত প্রতি ভরি দাম ১,৭২,০০০ থেকে ১,৭৫,০০০ টাকার মধ্যে এবং প্রতি গ্রাম দাম প্রায় ১৪,৭৫০ থেকে ১৫,০০০ টাকার মধ্যে ঘোরাফেরা করছে। তবে প্রতিদিনের পরিবর্তনের কারণে ক্রেতাদের উচিত সর্বশেষ বাজারদর যাচাই করে কেনাবেচা করা।
২০২৫ সালে ২৪ ক্যারেট সোনার দাম
| সোনার ধরন | প্রতি গ্রাম দাম (৳) | প্রতি ভরি দাম (৳) | বিশুদ্ধতা |
| ২৪ ক্যারেট | ১৪,৭৫০ – ১৫,০০০ | ১,৭২,০০০ – ১,৭৫,০০০ | 99.9% |
| ২২ ক্যারেট | ১৩,৯০০ – ১৪,২০০ | ১,৬২,০০০ – ১,৬৫,০০০ | 91.6% |
| ২১ ক্যারেট | ১২,৮০০ – ১৩,১০০ | ১,৫০,০০০ – ১,৫৩,০০০ | 87.5% |
| ১৮ ক্যারেট | ১০,৯০০ – ১১,২০০ | ১,২৮,০০০ – ১,৩১,০০০ | 75% |
ভরি ও গ্রামে সোনার দাম গণনার নিয়ম

বাংলাদেশে সাধারণত ভরি এককে সোনা কেনাবেচা করা হয়। তবে আন্তর্জাতিক মান গ্রামে নির্ধারিত।
- ১ ভরি = ১১.৬৬৪ গ্রাম
যদি প্রতি গ্রাম ২৪ ক্যারেট সোনার দাম হয় ১৪,৮০০ টাকা, তাহলে
প্রতি ভরি দাম = ১৪,৮০০ × ১১.৬৬৪ = প্রায় ১,৭২,৮০০ টাকা।
এভাবে গ্রাম থেকে ভরির হিসাব বা ভরি থেকে গ্রামের হিসাব বের করা যায়।
২০২৫ সালে সোনার দামে পরিবর্তনের প্রধান কারণ
১. আন্তর্জাতিক বাজারের প্রভাব – বৈশ্বিক অর্থনীতি অস্থির হলে এবং মার্কিন ডলার শক্তিশালী হলে সোনার দাম বাড়তে থাকে।
২. তেল বাজারের ওঠানামা – তেলের দাম বাড়লে পরিবহন ও আমদানি খরচ বৃদ্ধি পায়, যার প্রভাব সোনার দামে পড়ে।
৩. রাজনৈতিক পরিস্থিতি – যুদ্ধ, নির্বাচন, কিংবা আন্তর্জাতিক উত্তেজনা বিনিয়োগকারীদের সোনার দিকে ঝুঁকিয়ে দেয়, ফলে দাম বাড়ে।
৪. বাংলাদেশ ব্যাংক ও শুল্কনীতি – আমদানি কর, ভ্যাট বা শুল্ক বাড়লে স্থানীয় বাজারে সোনার দাম বৃদ্ধি পায়।
৫. চাহিদা ও জোগান – উৎসব বা বিবাহ মৌসুমে চাহিদা বাড়লে দামও সাময়িকভাবে বেড়ে যায়।
৬. মুদ্রাস্ফীতি – অর্থনৈতিক মুদ্রাস্ফীতির কারণে মানুষ সোনাকে নিরাপদ সম্পদ হিসেবে কেনে, ফলে দাম বাড়ে।
৭. বিনিয়োগ প্রবণতা – শেয়ারবাজার বা ক্রিপ্টোর অস্থিরতা বাড়লে বিনিয়োগকারীরা সোনায় ঝুঁকে পড়েন।
৮. স্থানীয় বাজার প্রতিযোগিতা – জুয়েলার্স সমিতির নির্ধারিত রেট এবং দোকানভেদে প্রতিযোগিতার কারণে দামে ভিন্নতা দেখা দেয়।
সোনায় বিনিয়োগের সুবিধা ও ঝুঁকি
সুবিধা:
- দীর্ঘমেয়াদে সব সময়ই লাভজনক।
- সহজে কেনাবেচা করা যায়।
- মুদ্রাস্ফীতি থেকে রক্ষা করে।
- প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে সম্পদ হিসেবে সংরক্ষণ করা যায়।
ঝুঁকি:
- স্বল্পমেয়াদে দাম ওঠানামা বেশি হয়।
- নকল বা ভেজাল সোনা কেনার ঝুঁকি থাকে।
- ভ্যাট, ট্যাক্স ও মেকিং চার্জের কারণে খরচ বেড়ে যায়।
বাংলাদেশে ২৪ ক্যারেট সোনার বাজারে প্রভাব
বাংলাদেশে সোনার বাজার সবসময়ই সক্রিয় এবং গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে বিয়ে, ধর্মীয় উৎসব ও বিশেষ উপলক্ষে সোনার চাহিদা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়। ২৪ ক্যারেট সোনা খাঁটি হওয়ায় সাধারণ গহনার দোকানে তুলনামূলক কম পাওয়া যায়, কারণ এটি নরম এবং সহজে আকার ধরে রাখতে পারে না। তবে বিনিয়োগকারীরা এটিকে সবচেয়ে নিরাপদ সম্পদ হিসেবে দেখে থাকেন।
ব্যাংক, ব্যবসায়ী এবং ধনী শ্রেণি দীর্ঘমেয়াদী সঞ্চয়ের জন্য ২৪ ক্যারেট সোনা ক্রয়ে বেশি আগ্রহী। আন্তর্জাতিক বাজারের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশের বাজারেও দাম দ্রুত ওঠানামা করে। ফলে ক্রেতারা প্রায়ই ভরি ও গ্রামে হালনাগাদ দাম সম্পর্কে জানতে চান। বলা যায়, ২৪ ক্যারেট সোনা বাংলাদেশের অর্থনীতি ও বিনিয়োগ প্রবণতায় বড় প্রভাব ফেলছে।
ভবিষ্যৎ প্রবণতা – ২০২৫ এর পর সোনার দাম কোনদিকে যেতে পারে?

বিশ্লেষকদের মতে, ২০২৫ সালের পর সোনার বাজারে নিম্নলিখিত প্রবণতা দেখা যেতে পারে:
- বিশ্ব অর্থনীতির অস্থিরতা – মুদ্রাস্ফীতি ও আর্থিক সংকট সোনার দাম বাড়িয়ে দিতে পারে।
- মার্কিন ডলারের শক্তিশালী অবস্থা – ডলার শক্তিশালী হলে সোনা নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে আরও জনপ্রিয় হয়।
- এশিয়ার দেশগুলোতে চাহিদা বৃদ্ধি – ভারত, চীন ও বাংলাদেশে সোনার চাহিদা বাড়তে থাকায় দামও বাড়তে পারে।
- বাংলাদেশের বাজারে প্রভাব – আন্তর্জাতিক বাজারের সাথে তাল মিলিয়ে দেশীয় বাজারেও দাম ঊর্ধ্বমুখী থাকতে পারে।
- রাজনৈতিক ও বৈশ্বিক স্থিতিশীলতা – যদি আন্তর্জাতিক উত্তেজনা কমে যায় তবে দাম কিছুটা কমতেও পারে।
- তেল বাজারের প্রভাব – তেলের দামে পরিবর্তন হলে তা সোনার বাজারেও প্রতিফলিত হবে।
- বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতি – আমদানি শুল্ক বা কর বাড়লে দাম আরও বৃদ্ধি পেতে পারে।
- বিনিয়োগকারীদের আস্থা – সোনা দীর্ঘমেয়াদী নিরাপদ সম্পদ হিসেবে বিনিয়োগকারীদের কাছে জনপ্রিয় থাকবে।
- উৎসব ও মৌসুমি প্রভাব – উৎসবের মৌসুমে চাহিদা বেড়ে গিয়ে দাম সাময়িকভাবে বাড়তে পারে।
- টেকসই বিনিয়োগ প্রবণতা – ক্রিপ্টো ও স্টকের পাশাপাশি সোনা ভবিষ্যতেও অন্যতম নিরাপদ বিকল্প হবে।
📌 সংক্ষেপে বলা যায়, ২০২৫ সালের পর সোনার দাম সামগ্রিকভাবে ঊর্ধ্বমুখী থাকার সম্ভাবনাই বেশি। তবে আন্তর্জাতিক অর্থনীতি ও রাজনৈতিক পরিস্থিতির ওপর ভিত্তি করে এর পরিবর্তন হতে পারে।
FAQs
Q1. ২৪ ক্যারেট সোনা বলতে কী বোঝায়?
Ans: ২৪ ক্যারেট সোনা হলো প্রায় ১০০% খাঁটি সোনা, যেখানে কোনো ধাতব মিশ্রণ থাকে না। এটি সবচেয়ে বিশুদ্ধ এবং নরম সোনা হিসেবে পরিচিত। এ কারণে এর বাজারমূল্য সর্বোচ্চ হয়। তবে নরম হওয়ার কারণে দৈনন্দিন ব্যবহারের গহনা তৈরিতে এটি কম ব্যবহৃত হয়।
Q2. আজ ২৪ ক্যারেট স্বর্ণের দাম কত বাংলাদেশে?
Ans: বর্তমানে ২০২৫ সালে ২৪ ক্যারেট সোনার দাম ভরিতে প্রায় ১,৭২,০০০ – ১,৭৫,০০০ টাকার মধ্যে ঘোরাফেরা করছে। প্রতি গ্রামে দাম প্রায় ১৪,৭৫০ – ১৫,০০০ টাকা। তবে বাজারের চাহিদা, ডলারের মান এবং আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি অনুসারে প্রতিদিন দাম ওঠানামা করে।
Q3. ২৪ ক্যারেট সোনা দিয়ে কি গহনা বানানো যায়?
Ans: যেহেতু ২৪ ক্যারেট সোনা নরম এবং ভঙ্গুর, তাই এটি দিয়ে গহনা বানানো বেশ কঠিন। সাধারণত গহনা তৈরিতে ২২ ক্যারেট সোনা ব্যবহার করা হয়, কারণ তা টেকসই হয়। তবে বিশেষ কিছু অলঙ্কার বা সংগ্রহযোগ্য জিনিসপত্রে ২৪ ক্যারেট সোনা ব্যবহার করা হয়।
Q4. সোনার দাম প্রতিদিন কেন পরিবর্তিত হয়?
Ans: সোনার দাম নির্ভর করে আন্তর্জাতিক বাজার, ডলার রেট, তেলের দাম এবং রাজনৈতিক পরিস্থিতির ওপর। বাংলাদেশে আমদানি শুল্ক ও ভ্যাট নীতিও এর দামকে প্রভাবিত করে। এজন্য প্রতিদিন সোনার দাম ভিন্ন হতে পারে এবং ক্রেতাদের সর্বশেষ রেট জানা প্রয়োজন।
Q5. ২০২৫ সালে বিনিয়োগের জন্য ২৪ ক্যারেট সোনা কি ভালো?
Ans: হ্যাঁ, দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগের জন্য ২৪ ক্যারেট সোনা এখনো অন্যতম নিরাপদ বিকল্প। এর মূল্য সময়ের সাথে বাড়ার সম্ভাবনা বেশি। তবে স্বল্পমেয়াদে বাজারে ওঠানামা থাকায় কিছুটা ঝুঁকি থাকে। তাই বিনিয়োগের আগে সর্বশেষ বাজার রেট এবং বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ।
Q6. ২৪ ক্যারেট সোনার দাম কি ২২ ক্যারেটের চেয়ে অনেক বেশি?
Ans: হ্যাঁ, কারণ ২৪ ক্যারেট সোনায় কোনো ধাতব মিশ্রণ থাকে না, তাই এটি সবচেয়ে বিশুদ্ধ। ২২ ক্যারেট সোনা প্রায় ৯১.৬% বিশুদ্ধ হলেও, তাতে তামা বা রূপার মতো ধাতু মেশানো থাকে। এজন্য ২৪ ক্যারেটের দাম সবসময় ২২ ক্যারেটের তুলনায় বেশি হয়।
Q7. কোথা থেকে ২৪ ক্যারেট সোনা কেনা সবচেয়ে নিরাপদ?
Ans: ২৪ ক্যারেট সোনা কেনার জন্য সবসময় অনুমোদিত জুয়েলার্স বা স্বীকৃত দোকান থেকে কেনা উচিত। বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতির (বাজুস) তালিকাভুক্ত দোকানগুলো থেকে কেনা সবচেয়ে নিরাপদ। এতে প্রতারণার ঝুঁকি কমে এবং খাঁটি সোনা পাওয়া যায়।
উপসংহার
সোনা শুধুমাত্র একটি মূল্যবান ধাতুই নয়, এটি মানুষের আস্থা, ঐতিহ্য এবং আর্থিক নিরাপত্তার প্রতীক। যুগে যুগে মানুষ সোনা ব্যবহার করেছে সৌন্দর্য বৃদ্ধি, সম্পদ সংরক্ষণ এবং নিরাপদ বিনিয়োগের জন্য। ২০২৫ সালে এসে সোনার দামের পরিবর্তন আরও দ্রুত হচ্ছে, তাই প্রতিটি ক্রেতা ও বিনিয়োগকারীর জন্য ২৪ ক্যারেট স্বর্ণের দাম কত today ২০২৫ জানা অপরিহার্য।
ভরি ও গ্রামে সঠিক দাম জেনে লেনদেন করলে প্রতারণা থেকে রক্ষা পাওয়া যায় এবং সঠিক মূল্যে কেনাবেচা সম্ভব হয়। ভবিষ্যতে বিনিয়োগ করতে হলে প্রতিদিনের আপডেট বাজার তথ্য জানা এবং শুধুমাত্র বিশ্বস্ত দোকান বা অনুমোদিত জুয়েলার্স থেকে সোনা কেনা বুদ্ধিমানের কাজ। এভাবেই সোনা হতে পারে আপনার আর্থিক নিরাপত্তার অন্যতম সঙ্গী।
